বালিশ, তোয়ালে, আন্ডারপ্যান্ট – রোজকার ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মধ্যে এই তিনটি নাম একেবারে প্রথমে মনে পড়ে। নষ্ট হচ্ছে না বলে বছরের পর বছর গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যবহার করছেন? নিজের ক্ষতি না চাইলে এই ভুল করবেন না। কারণ, তাতে আপনার শারীরিক নানা ক্ষতি হতে পারে। তাই নিজের ভাল চাইলে সময়মতো নিত্য ব্যবহৃত সামগ্রী বদল করুন। কবে কোনটি বদল করবেন, জেনে নিন।
একটি বাড়িতে বছরের পর বছর ধরে বালিশ (Pillow) ব্যবহৃত হয়। বালিশ বাতিল করার প্রবণতা অনেকেরই থাকে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বালিশ বদল করুন। নইলে বালিশের ভিতরে থাকা ধুলো থেকে অ্যালার্জির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। কিংবা পুরনো বালিশ আপনার ঘাড়, কাঁধে ব্যথার কারণও হয়ে উঠতে পারে। তাই ১-২ বছর অন্তর বালিশ পরিবর্তন করুন।
ঘরে পরার জুতোর ক্ষেত্রে আমরা বেশ উদাসীন। তাই যতক্ষণ না পর্যন্ত খারাপ হচ্ছে, তা বদল করতে চাই না আমরা। পায়ে ছত্রাকজনিত সংক্রমণ (Fungal Infection) এড়াতে ৬ মাস অন্তত জুতো (Slipper) বদল করুন।
তোয়ালে নষ্ট হতে সময় লাগে। বহুদিন ব্যবহারের পর রং একটু চটে যায় ঠিকই। তবে তা ছিঁড়ে ফেলা যথেষ্ট কঠিন। তা বলে বছরের পর বছর একই তোয়ালে (Towel) ব্যবহার করবেন না। চেষ্টা করুন প্রতি বছর তোয়ালে বদল করার। আর একেবারেই তা সম্ভবপর না হলে সর্বাধিক ১ বছরের বেশি একই তোয়ালে ব্যবহার করবেন না। এছাড়া অনেকসময় বাড়িতে এক তোয়ালে কয়েকজনকে ব্যবহার করতে দেয়া যায়। একজনের তোয়ালে আরেকজন ব্যবহার করলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন এবং ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে। ফলে র্যাস, ব্রণ এবং কনজাঙ্কটিভাইটিস হতে পারে। চার-পাঁচ বার ব্যবহারের পরেই তোয়ালে ভালো করে ধুয়ে কড়া রোদে শুকিয়ে নেয়া উচিত।
প্রতিদিন নিয়ম করে যেমন ব্রাশ করা হয় মুখের জীবাণু দূর করতে, ঠিক তেমনই নিয়ম করে উচিত অন্তর্বাস পাল্টানো । চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা অন্তর অর্থাৎ দিনে দু-বার অন্তর্বাস বদল করা উচিত বলে ।
ত্বকের সমস্যা যাতে না হয় তাই সাবান মাখার জালি (Shower Puff) বদল করুন। আড়াই মাস অন্তর অন্তর পরিবর্তন করুন ।
শিশুরা অনেক বেশি স্পর্শকাতর। তাই তাদের স্বাস্থ্যের দিকে বেশি নজর দিন। শিশুর ব্যবহৃত যেকোনো জিনিশ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন এবং পরিবর্তন করুন ।
দড়িতে পা লেগে গেলেই হেরে যেতে হবে এই ভয়ে প্রানপ্রন চেষ্টা করা হতো ঠিক মত লাফানোর। কে কার থেকে বেশি লাফাতে পারে।
খেলাটির নাম দড়ি লাফ ।
ছেলেবেলায় দড়ি লাফ খেলা খেলেন নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজকাল কিন্তু সেই দড়ি লাফানো একটি দারুণ ব্যায়াম হিসেবে পরিচিত। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, ওজন কমাতে, শরীরের ঘাম ঝরাতে দড়ি লাফের বিকল্প খুব কম।
দড়ি লাফের যত উপকারিতা
দড়ি লাফ এমন একটা ব্যায়াম যা অনায়াসে যেকোনো স্থানেই করা যায়। ঘরে থেকেই করতে পারেন বলে যেকোনো বিরূপ আবহাওয়া আপনার এক্সারসাইজ রুটিন এ বাঁধা হতে পারবে না। একে একটি ভালো কার্ডিও ও হাই ইনটেনসিভ ইন্টারভেল ট্রেইনিং ও বলা হয়। এর আরেকটা দারুণ দিক হলো, আপনি আপনার শিশুদের সঙ্গে নিয়েও এই ব্যায়াম করতে পারেন।
১০০ বার দড়িলাফ দিলে ২০০ ক্যালরি শক্তি পোড়ে। ‘কার্ডিও’ নামে পরিচিত শরীর গরম করার ব্যায়াম হিসেবে দড়ি লাফ বেশ কার্যকর। অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, অন্য যে কোনও কার্ডিওর চেয়ে দড়ি লাফের কার্যকারিতা বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রশিক্ষক (ট্রেইনার) জিলিয়ান মাইকেলের মতে, দড়ি লাফ অন্য যে কোনও কার্ডিও ব্যায়ামের চেয়ে দ্রুত ও সাবলীলভাবে শরীর গরমের কাজটি করে।
দড়ি লাফের অভ্যাস আপনার হার্ট ও ফুসফুসের কার্য ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিতে পারে অনেকগুণ। নিয়মিত দড়ি লাফের ফলে, হার্ট সারা শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালিত করে। যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি-উপাদান সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। এছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাস আদান প্রদানের ক্ষেত্রেও দম বাড়াতে অনেক উপকারী।
দেহের অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে দড়ি লাফের জুড়ি নেই। এটি দৌড়ানোর চেয়ে বেশি ক্যালোরি পোড়াতে সক্ষম। তাই নিয়মিত দড়ি লাফের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত ওজন, মেদ কমানো সম্ভব। এক ঘণ্টা স্কিপিং-এ ১৩০০ ক্যালোরি খরচ হয়। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে যতটা সম্ভব স্কিপিং করুন এবং আস্তে আস্তে দম অনুযায়ী সময়টা বাড়াতে থাকুন।
নিয়মিত দড়ি লাফ মাধ্যমে কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত মাংসপেশির গঠন সুন্দর ও মজবুত হয়। তাছাড়া এতে শরীরের উপরের অংশ যেমন হাত ও কাঁধ বলিষ্ঠ হয়। এই ব্যায়ামে হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে এটি অস্টিওপোরোসিস-এর ঝুঁকি কমায়।
স্কিপিং বা দড়ি লাফ করার আগে যা মনে রাখবেন
১) একটি ভালো মানের স্কিপিং রোপ কিনে অথবা বানিয়ে নিবেন।
২) অনেক বলে, খালি পায়ে স্কিপিং ভালো এতে পায়ের অনেক সমস্যাও ভালো হয়। কিন্তু হঠাৎ করে খালি পায়ে স্কিপিং করলে আঘাত পেতে পারেন। তাই স্পোর্টস জুতা পরে স্কিপিং করাই শ্রেয়।
৩) বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জন্য ভালো মানের স্পোর্টস ব্রা পরে স্কিপিং করা উচিত।
৪) প্রথমে ধীরে ধীরে স্কিপিং করবেন এবং আস্তে আস্তে গতি বাড়াবেন ।
৫) সমান জায়গায় স্কিপিং করবেন। উডেন ফ্লোর হলে ভালো হয়।
৬) এটি একটি হাই ইনটেনসিটি ব্যায়াম তাই ওয়ার্ম আপ খুবই জরুরী। প্রথমে ৫ মিনিট অবশ্যই ওয়ার্মআপ করবেন।
৭) স্কিপিং করার ক্ষেত্রে প্রথম ১৫ মিনিট স্কিপিং করবেন, তারপর প্রতি ১০-১৫ সেকেন্ড বিরতি।
স্কিপিং বা দড়ি লাফ যেকোন ব্যায়ামের সহজ বিকল্প হতে পারে। নিয়মিত এই ব্যায়াম করলে মন-মানসিকতা ইতিবাচক হয়ে উঠে । তাই আজই কিনুন বা বানিয়ে নিন স্কিপিং রোপ যেটি হতে পারে, আমাদের সবার নিত্য দিনের শরীর চর্চার ও সুস্থ থাকার আদর্শ উপকরণ।
সব শেষে বলুন তো ৩০ সেকেন্ডে এক পায়ে সর্বোচ্চ দড়ি লাফের বিশ্ব রেকর্ডটি কার?
তথ্যসূত্র: ইনসাইডার ডটকম, ইলেভেটরোপ ডটকম, উইকিহাউ ডটকম
]]>